টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা। এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে নির্মাণাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ লেকও। এতে নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য তৈরি করা শতকোটি টাকার এ লেকের।
স্থানীয়রা বলছেন, সিদ্ধিরগঞ্জের সৌন্দর্য বাড়ার জন্য লেকটি নির্মাণ করা হলেও অতিবৃষ্টিতে এটি কোনো কাজে আসছে না। কাজ শেষ করার আগেই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে কাজ শেষ করার পর কী হবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
রোববার (১৩ আগস্ট) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ লেকের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, লেকপাড়ের বসার ভাসমান মঞ্চগুলো পানিতে ডুবে গেছে। ফলে জনশূন্য হয়ে পড়েছে লেকপাড়।
এর আগে বিলুপ্ত জলাধারটি উদ্ধার এবং নির্মল পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) সিটি গভার্নেন্স প্রকল্পের (সিজিপি) আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিদ্ধিরগঞ্জ পুনঃখননসহ রাস্তা, ড্রেন, ওয়াকওয়ে, ল্যান্ডস্কেপিংসহ সৌন্দর্যবর্ধন শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩ মে দুই ধাপে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রকল্পটির কাজের উদ্বোধন করেন।
নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা পুল থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ডিএনডি খালের সৌন্দর্যবর্ধনে ৬৩ কোটি ৪৮ লাখ এবং লেকের ওপর ছয়টি ব্রিজ নির্মাণে ৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স উদয়ন বিল্ডার্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সূত্রমতে, এ প্রকল্পের আওতায় লেক খনন সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, আরসিসি ড্রেন তৈরি হচ্ছে চার কিলোমিটার, আরসিসি রাস্তা থাকছে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, সিসি ব্লক দ্বারা লেকের পাড় বাঁধাই, ডিভাইডার ওয়াল সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার, থাকছে অ্যাম্ফিথিয়েটার ও নৌকা চালানোর ৯টি ঘাট। আরও থাকছে ভাসমান মঞ্চ তিনটি, ওয়াটার গার্ডেন তিনটি, ঝুলন্ত বাগান তিনটি, পাবলিক টয়লেট, ফোয়ারা দুটি, ওয়েটিং শেড দুটি, প্ল্যানটার বক্স ১৫টি, ডাস্টবিন ২৮টি, স্ট্রিট লাইট সিঙ্গেল ২৮টি এবং ডাবল স্ট্রিট লাইন থাকবে ১৮২টি। এছাড়া দোলনা থাকবে ছয়টি, সুইং স্নাইট দুটি, ঢেঁকিকল সাতটি, ব্রিজের মই তিনটি, সিটিং বেঞ্চ ১৩২টি, আরসিসি ব্রিজ তিনটি এবং ফুট ওভারব্রিজ তিনটি।
লেকের কাজ শুরুর পর থেকে এখানকার বাসিন্দাদের বিনোদনের খোরাক মিটিয়ে আসছিল ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সিদ্ধিরগঞ্জ লেক। বিকেল হলেই লিকটিতে ভিড় করতেন শত শত দর্শনার্থী। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে লেকটিতে ঢল নামতে দেখা যেতো দর্শনার্থীদের।
তবে টানা বৃষ্টিতে লেকের নানা স্থাপনা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় দর্শনার্থীরা লেকটিতে ঘুরতে এসে হতাশ হচ্ছেন। লেকপাড় সংলগ্ন মিজমিজি পাগলাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা দিপু ভুইয়া বলেন, ‘অবসব সময়ে বন্ধুদের নিয়ে এতোদিন লেকের পাড়ে আড্ডা দেওয়া হতো। তবে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বসার জায়গাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই আর আড্ডা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
বন্ধুদের নিয়ে লেকপাড়ে ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র আজিজুল হাকিম বলেন, ‘এমন মনোরম পরিবেশে লেকের পাড়ে আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা। কিন্তু এসে দেখি বসার স্থানগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাই ভেবেছি অন্য কোথাও ঘুরতে যাবো।’
নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়ে গিয়ে বসার স্থানগুলো ডুবে গেছে। সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান খান রিপন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এমনটা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে আর এমন সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজগর হোসেন বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। লেকের পানি বেড়ে গেলে তা সরানোর জন্য এখনো সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অত্যাধিক বৃষ্টির কারণে লেক ডুবে গেছে শুনেছি।
তিনি বলেন, কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগির সমস্যার সমাধান হবে।
আরও পড়ুন